ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ২৯ স্কুল-মাদরাসার নতুন একাডেমিক ভবন

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের অর্থায়নে প্রায় ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে চলতি অর্থবছর চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৯টি স্কুল ও মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সুত্র জানায়, চলতি অর্থবছর চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন জনপদে ৬টি মাদ্রাসা ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চার তলা বিশিষ্ট আধুনিকমানের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এসব প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কর্মকাÐ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সময়ে সর্বশেষ বরাদ্দ পেয়েছে চকরিয়া উপজেলার আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা। ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দে আমজাদিয়া মাদরাসায় নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে চার তলা বিশিষ্ট আধুনিক মানের নতুন একাডেমিক ভবন। এতে এই মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থীর পড়ালেখা নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা থাকছে না। সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নতুন এই ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন এবং নির্মাণকাজ সরাসরি তদারকি করছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপঙ্কর বড়ুয়া মাদ্রাসার চার তলা বিশিষ্ট নতুন এই একাডেমিক ভবনটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পেয়েই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। এ সময় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ, আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াছ, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার, ঠিকাদার দীপঙ্কর বড়ুয়া পিন্টু, আমজাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সাইদুল হক চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে খুটাখালীতে ভবন নির্মাণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জয়নাল আবেদিন, সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর হক, খুটাখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলী এবং সুধীজন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চকরিয়া সূত্র জানায়, ৩ কোটি ২৪ লক্ষ ১১ হাজার ৩৭৮ টাকা ব্যয়ে ১১২ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ৩২ ফুট প্রস্তের আধুনিকমানের চার তলা বিশিষ্ট নতুন এই একাডেমিক ভবনটির নির্মাণকাজ আগামী দেড়বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। সেজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দেওয়াসহ সার্বিক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. পারভেজ ইষাণ বলেন, আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার নতুন এই একাডেমিক ভবনটির নির্মাণকাজ যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য তোড়জোড় চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনের ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। দু-একদিনের মধ্যে বেইজ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে। কাজের গুণগত মান যাতে বজায় থাকে সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা ফাজিল মাদ্রাসা, খুটাখালী তমিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ডুলাহাজারা আরবিয়া মারুফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কাকারা তাজুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, ঢেমুশিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ ৬টি মাদরাসা এবং চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার আরো ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। অপরদিকে আরো ১২ টি মাদ্রাসা ও স্কুলের উর্ধমূখী স¤প্রসারণ এবং সেকেণ্ডারী স্কুল ইমপ্লিমেন্টেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ চলছে।

আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াছ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ১৯৬৪ সালে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এলাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু মাদ্রাসার মূল একাডেমিক ভবনটি অনেক পুরোনো এবং জরাজীর্ণ হওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল। এই অবস্থায় বর্তমান সরকার মাদ্রাসায় নতুন একাডেমিক ভবন দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সবার মাঝে প্রোথিত দুশ্চিন্তা দূর হবে। এজন্য কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলমকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ তিনি এমপি হিসেবে এই ভবন নির্মাণের ডিও না দিলে আজ এই ভবন পাওয়া যেত না।

জানতে চাইলে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এলাকায় অনেকে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু তারা দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। করতে পারেননি কোন রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উলে­খযোগ্য কোন ভবন।

তিনি বলেন, আমি ২০১৮ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই দায়িত্ব পালন শুরু করেছি। যার প্রেক্ষিতে আমার নির্বাচনী এলাকায় ৫টি মাদ্রাসা ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একেবারে চার তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ছাড়াও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিতের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কর্মকাÐ শুরু হয়েছে।

পাঠকের মতামত: